পর্ব ৩- এখন প্রশ্ন হলো কোন সাক্ষ্য প্রমান ছাড়াই যখন জাবিরের দাবিকৃ্ত সম্পত্তি একইভাবে ফেরত দিতে কিসে আবুবকরকে বাধা দিয়েছিল? জাবিরের প্রতি তার যদি এমন ধারনা হয়ে থাকে যে, সে মিথ্যা বলে স্বীয় স্বার্থ উদ্বার করবে না; তবে ফাতিমার প্রতি তার এ ধারনা গ্রহনে কিসে তাকে বাধাগ্রস্ত করেছে যে, ফাতিমা এক টুকরা জমির জন্য রাসুল (সাঃ) সম্বন্ধ্বে মিথ্যা বলতে পারে না। ফাতিমার সর্বজন স্বীকৃ্ত সত্যবাদীতা ও সততাই তো তাঁর দাবীর সত্যতা সম্পর্কে যথেষ্ট ছিল।তবু আবুবকরের সন্তুষ্টির জন্য তিনি আলী ও উম্মে আয়মনের মতো সম্মানিত সাক্ষী উপস্তিত করেছিলেন।একথা বলা হয়ে থাকে কোরানের নীচের আয়াতের নীতি অনুসারে ফাতিমার দাবী প্রত্যাখ্যাত হয়েছিলঃ
“২জন পুরুষ সাক্ষী রাখবে;২ জন পুরুষ সাক্ষী পাওয়া না গেলে ১জন পুরুষ ও ২জন নারী সাক্ষী রাখবে “(কোরানঃ ২ঃ২৮২)।
কোরানের উক্ত নীতি যদি সর্বক্ষেত্রে সার্বজনীন হয়ে থাকে তবে প্রত্যেক ক্ষেত্রেই এর প্রয়োগ থাকবে। কিন্তু একদিন একজন আরববাসী রাসুলের (সাঃ) সাথে একটি উট নিয়ে বিরোধ করে। এতে খুজায়মা ইবনে সাবিত আনসারী রাসুলের পক্ষে সাক্ষ্য প্রদান করলেন। এই একজনের সাক্ষীকে ২ জনের সাক্ষীর সাক্ষ্য হিসাবে গ্রহন করা হয়েছিল। কারন তার সততা ও সত্যবাদীতা সম্পর্কে কারো কোন সঙ্গশয় ছিল না। এ কারনেই রাসুল (সাঃ) তাকে “জুশ শাহাদাতাইন”(২জন সাক্ষীর সমান) উপাধীতে ভুষিত করেছিলেন (বুখারী,৪র্থ খন্ড,পৃঃ২৪;৬ষ্ট খন্ড,পৃঃ১৪৬;তায়ালিসী,৩য় খন্ড, পৃঃ৩০২; হাম্বল ,৫ম খন্ড,পৃঃ১৮৮,১৮৯,২১৬;বার,২য় খন্ড,পৃঃ৪৪৮;আছীর,২য় খন্ড,পৃঃ১১৪;সানানী,৮ম খন্ড,পৃঃ৩৬৬-৩৬৮)।
ফলত এব্যাবস্থার কারনে আয়াতটির সাধারনত্ব প্রভাবিত হয় নি বা এটা সাক্ষ্য সংক্রান্ত বিধানের বিপরীত কিছু নয়। সুতরাং রাসুলের মতানুসারে সত্যবাদিতা গুনের জন্য একজন সাক্ষীকে ২জন সাক্ষীর সমান ধরে নেয়া হয়ে থাকে। তাহলে ফাতিমার পক্ষে আলী ও উম্মে আয়মনের সাক্ষ্য কি তাদের নৈ্তিক মহত্ব ও সত্যবাদীতার জন্য যথেষ্ট ছিল না? এছাড়া উক্ত আয়াতে এ দুপথ ছাড়া দাবী প্রতিষ্টা করার আর কোন পথ উল্লেখ করা হয় নি।এ বিষয়ে কাজী নুরুল্লা মারআশী (৯৫৬/১৫৪৯-১০১৯/১৬১০) লিখেছেনঃ
উম্মে আয়মনের সাক্ষ্য অসম্পুর্ন বলে যারা প্রত্যাখ্যান করেছে তারা প্রকৃতপক্ষে ভুল করেছে। কারন কোন কোন হাদিসে দেখা যায় ১জন সাক্ষীর ভিত্তিতে সিদ্বান্ত প্রদান করা বৈ্ধ এবং তাতে কোরানের নির্দেশ ভংগ হয়েছে বলে মনে করা হয় নি। কারন এ আয়াতের গুঢ়ার্থ হলো ২জন পুরুষ অথবা ১জন পুরুষ ও ২জন নারী সাক্ষীর ভিত্তিতে সিদ্বান্ত নেয়া যেতে পারে এবং তাদের সাক্ষ্যই যথেষ্ট। একথা দ্বারা এটা বুঝায় না যে, যদি সাক্ষীর সাক্ষ্য ছাড়া অন্য কোন ক্ষেত্র থেকে থাকে তা গ্রহনীয় হবে না এবং সে ভিত্তিতে রায় দেয়া যাবে না- এটাই হচ্ছে আয়াতটির মুল ভাব। কোন কিছুর ভাবার্থ চুড়ান্ত যুক্তি নয়। তাই এ ভাবার্থও গ্রাহ্য করা যায় না। বিশেষ করে হাদিসের বিপরীত ভাব ব্যাক্ত করেছে। এ ভাবার্থকে এড়িয়ে গেলে তা আয়াত অমান্য করা বুঝায় না। দ্বিতীয়ত আয়াতটি দুটি বিষয়ের যে কোন একটিকে বেছে অনুমতি দেয়া হয়েছে। তা হলো ২ জন পুরুষ বা একজন পুরুষ ও ২ জন নারী। যদি হাদিস দ্বারা ৩য় একটি বিষয় বেছে নেয়ার জন্য যোগ করা হয় তাতে কি কোরানের আয়াত লংঘিত হয়েছে বলা যাবে? যাহোক এতে বুঝা যাচ্ছে যে, দাবীদার ২জন পুরুষ বা ১জন নারী ও ২জন নারী সাক্ষী হিসাবে উপস্থিত করতে বাধ্য নয় কারন যদি কোন দাবীতে কোন সাক্ষী না থাকে তাহলে আল্লাহর নামে শপথ করে বললেই তার দাবী আইন্সিদ্ব হবে এবং তার অনুকুলে সিদ্বান্ত দেয়া যাবে। এতদ সংক্রান্ত বিষয়ে ১২ জনের অধিক সাহাবী বর্ননা করেছেন যে, আল্লাহর রাসুল শপথ গ্রহন পুর্বক ১জন সাক্ষীর সাক্ষ্যের ভিত্তিতে সিদ্বান্ত গ্রহন করতেন।...চলবে...
নিবেদক- মোহাম্মদ হোসাইন, সদস্য সচিব বাংলাদেশ ইমামিয়া জনকল্যাণ ফাউন্ডেশন, চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা শাখা।